পৃথিবীতে প্রতিদিন কতরকমের মানুষই না চোখে পড়ে । চোখে পড়া বাস্তবই কি সত্যি ? মিথ্যেও তো হতে পারে । আধুনিক উচ্চবৃত্ত সমাজে গণিকাবৃত্তির সুযোগে পরীর এইরকম অনেক অভিজ্ঞতাই হয়েছে। প্রথম প্রথম অন্যরকম কিছু হলে , ভাবতে থাকত । তবে আজকাল অভ্যেস হয়ে গেছে । এই লাইনে বেশিদিন ফিল্ড জব করা যায় না। অনেকে টাকা কামিয়ে সরে পরে । কেউ আবার নিজেই এজেন্সি খুলে অন্যদের লাইনে নামায়। তবে তাদের লাইনে ঝামেলা অনেক । আজকাল মাঝেমাঝেই হোটেল , স্পা এইসবে পুলিশে না বলে কয়ে রেড করছে । হাইক্লাস এস্কর্ট সার্ভিসে এইসব হাঙ্গামা নেই । উচ্চবৃত্তের সামনে মশা , মাছিতে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না । সবাই সুযোগ পায় না । ব্যক্তিত্ব ,শারীরিক সৌন্দর্য্য , ত্বকের দ্যুতি , বিভিন্ন ভাষার সাবলীলতা আর সবশেষে পাসপোর্ট আছে কিনা , এত কিছু চিরুণী তল্লাশির পরেই সেইসব মহার্ঘ ভাতার চাকরি পাওয়া যায়। শুনেছি ওইসব কাজের খরিদ্দারগুলো ভীষণ রুচিসম্মত । গাড়িতে কোনও ছেনালি করে না , ডট টাইমে গাড়ি পয়েন্ট পিক আপ করে আর আমাদের ক্ষেত্রে সেই কখন থেকে গাড়ির জন্যে দাঁড়িয়ে আছি । কোম্পানির থেকে আগেই গাড়ির নম্বর চলে এসেছে । ” বাবাজীর কোনও পাত্তা নেই। ” বাইরে যা গরম পড়েছে । মেক আপ উঠল বলে । কলটাইম ছিল সন্ধে সাতটা। দূরে সিগন্যালের কাছে বড় ঘড়িতে সাড়ে সাতটা বাজল বলে । একটা গাড়ি অনেকক্ষণ ধরে আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে । রাতবিরেতে আবার কোনো ঝামেলা না হয়। গাড়ির নম্বরটা চোখে পড়ল । মোবাইলের ম্যাসেজের সাথে মিলে গেছে । হাত দিয়ে দাঁড় করালো । পেছনের দরজাটা খুলে গেল । ঢুকেই দেখতে পেল রিমলেস কাঁচের ভেতর দিয়ে অদ্ভুত দুটো চোখ। পুরোদস্তুর সুটেড বুটেড , গলায় টাই । অন্য সব কাস্টমারের সাথে একদমই বেমানান। ভীষণ চুপচাপ । এই জীবিকায় নতুন ধরণের মানুষকে ভীষণ ভয় লাগে । আগের মাসে একটা খুন হয়েছিল। লাশটা পরের দিন বাড়ির ফ্রিজ থেকে উদ্ধার করা হয় । মানুষের কামনাবাসনাগুলো আজকাল বড্ড অচেনা। এই ক্ষেত্রে নিজের থেকে কিছু না বলাই ভাল ।
ড্রাইভার বলল ,” আপনার নম্বরটা অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করছিলাম , নট রিচেবল বলছিল । পয়েন্টে আপনাকে দেখতে পেয়ে গাড়ি দাঁড় করলাম । ” ব্যাগের থেকে ফোনটা বার করে দেখি ,ভেতরে বেকায়দায় ফ্লাইট মোড অন হয়ে গেছে । ” জানেন তো এই রকম আমারও অনেকবারই হয় । ” ফোন ভুলে গলার স্বরে আকৃষ্ট হলাম । কী মিষ্টি গলা ! আচরণে এখনও কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়েনি। অন্য কাস্টমারের আঙুলগুলো এতক্ষণে অন্তত হাঁটুর উপরে কাপড়ের উপর দিয়ে সুড়সুড়ি দিত। কে জানে ইনি আবার ঘরের ভেতরে কোন মূর্তি না ধারণ করে । মানুষটির গা থেকে একটা সুন্দর ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। বাইরে আজকে ভীষণ জ্যাম । গাড়িটা অনেকক্ষণ ধরেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে । টকটক করে লোকটার পাশের জানলাটা ডেকে উঠল। কাচটা খুলতেই ভেসে উঠল প্রতিদিনের পরিচিত মুখ । এই ছেলেমেয়েগুলো ফুল বিক্রি করে । লোকটা একটা রজনীর তোড়া কিনে কাঁচটা বন্ধ করে দিল । সে তার সহযাত্রীর হাতে ফুলের তোড়াটা দিয়ে , এক মুখ হাসি নিয়ে বলল ,” আশা করি , ফুলে আপনার অ্যালার্জি নেই । ” গাড়ির মিউজিক প্লেয়ারে বেজে উঠেছে , ” তুম ইতনা যো মুসকুরা রহে হো…. ” মানুষটার প্রতি অদ্ভুত মুগ্ধতায় মন ভরে গেল । হঠাৎ গাড়িটা মূল রাস্তায় ওঠার আগে সামনে একটা ট্রাক দেখতে পেয়ে একটা জোর ঝাঁকুনি দিয়ে ব্রেক দিল। মানুষটি প্রায় গায়ের উপরে পড়ে গেল । পরক্ষণেই নিজেকে সামলে ” সরি ” বলে মাথা নীচু করে বসে রইল । অন্য মানুষে এই মাহেন্দ্রক্ষণে একটু বিপরীত লিঙ্গের শরীরটাকে শুঁকে নেয় বা ঘাড়ের কাছে মুখটাকে নিয়ে গিয়ে ঠোঁট দিয়ে আদর করে । কয়েকবছর এই লাইনে থাকতে থাকতে ওদের এই সাঙ্কেতিক ফোরপ্লে গুলো বুঝতে পারি কিন্তু আজকে বার বার মানুষটার সংকেত অধরাই থেকে যাচ্ছে । মানুষটাকে কি ভুল অনুমান করছি ? এইরকম মানুষের কথা গল্পের বইয়ে পাওয়া যায় । খুব ইচ্ছা করছে মানুষটাকে জানতে। নিজে থেকে প্রথম কথাটা শুরু করলাম ” আপনার নাম ?
ম্যাডাম আপনি কোথায় যাবেন ?( ড্রাইভার )
সেটা আমি কি করে জানব ?
এক মিনিট ! আপনিই তো কম্পেনিয়ান সাইটে ফোন করেছিলেন ? (ছেলেটি )
আমি কেন ফোন করতে যাব ? আমি তো ওই অফিসেই চাকরি করি ।
কী ? সেতো আমিও করি … ( ছেলেটি )
হঠাৎ মোবাইলে ফোন ঢুকল ” তুই কোথায় ? তোর ফোন অনেকক্ষণ ধরে নোট রিচেবল বলছিল । একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে । গাড়ির নাম্বারের শেষ ডিজিটটা ভুল ছিল । কাস্টমার খেপে ব্যোম । তোর জিপিএস অন কর । লাইভ লোকেশান পাঠা । গাড়িটা তোকে পিক আপ করে নেবে । ” হতভম্ব হয়ে গাড়ির থেকে বেরিয়ে যেতেই পরীর চোখে পড়ল, মানুষটির মাথা নীচু । গাড়িটা চলে গেল । বুকে জাপ্টে ধরা রজনীগন্ধা এখনও সঙ্গ ছাড়েনি । বেশি আকর্ষণে সুগন্ধ নষ্ট হয়ে যাবে ! ফুল বিক্রি করা ছেলেমেয়েগুলো সিগন্যালে অপেক্ষামান গাড়ির পাশে ঘুরঘুর করছে । ওদের একজনের হাতে ফুলের তোড়াটা দিয়ে চোখে পড়ল কিছুদূরে ফোঁস ফোঁস করা একটা বড় গাড়ির রাগী দুটো চোখ ।
আমি আমার লেখা গল্প দিতে চাই আপনাদের পত্রিকাতে। দয়াকরে জানান প্রসেডিওর ।