অনিরুদ্ধ সুব্রত

রাত্রির অপব্যয়

ঘুমিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে

পাঁচ মিনিটের ভাষণ দিতে

মাঝ রাতে বিছানা ছাড়লাম,

জেগে থাকা গুলোকে বাইরের ঘরে ডেকে

এক প্রস্থ সাবধান করাতে বললাম, শোনো–

” যদি খ্রিস্টপূর্ব কাল থেকে ব্যাপারটার ব্যাখ্যা

প্রকৃষ্ট ভাবে শুরু করি… ”

প্রত্যেকেই চেঁচাতে শুরু করল—

সস্তা ভাষণ শুনবে না,

তাই শুরুতেই থেমে যেতে হলো আমাকে,

তীক্ষ্ণ বিবৃতি আর অমনোযোগের আবহ তৈরি,

আর ভিড়ের মধ্যে থেকে বিচ্ছিন্ন বিদ্রুপ উঠছে–

কেউ বলছে, মানুষ জীবনে একবার মাত্র ঘুমোয়

কারও মতে, ঘুম আসলে রাত্রির অপব্যয়

কেউ ছুড়লো— ঘুমিয়ে পড়া মানুষদের নিদারুণ

সৌন্দর্য দেখার জন্য জেগে থাকাই একমাত্র উপায়,

কারও উত্তেজনা বলল, শরীরের ফাঁকিবাজি আর

পাতি স্বপ্নের রকমারি দোকানদারি

ব্যতীত, ঘুম আসলে কিচ্ছু নয়,

তাই ঘুমিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে

আমার আর এক মিনিটও বলা হলো না—

শেষে অ্যাসট্রের সঙ্গে নিকোটিনের উপকারিতা নিয়ে

একটা দীর্ঘ আলোচনা হয়ে

ভোরের দিকে তীব্র কাশিতে এসে থামলো।

 

ভূতের গল্প

কতবার ভেবেছি, একটা ভূতের গল্প লেখা হোক

—পারিনি, হয়ই নি

যে ভূত ভয় দেবে– কল্পনায় তাকে দেখিনি,

যে ভূতের আতঙ্কে ভীত হয়েছি, সে শুধু ভূত না

অভূতপূর্ব—

ভূতের ভূমিকা নিয়ে ভেবেছি—

কিন্তু একটি প্রকৃত ভূতের গল্প তার থেকে

হয় না।

যে ভূতেরা কোনও দিন মটকে দিল না ঘাড়,

যে ভূত রোগা, রক্ত মাংস-হীন, রুগ্ন হাড়

জোর করে তাকে বিভৎসতার কেস খাওয়ানো

সত্যিই কি খুব দরকার ?

ভেবেছি, পিছিয়েছি—

বাদ দিয়েছি যত নিরীহ কঙ্কালসার।

অথচ দেখেছি প্রতিটি অন্ধকারের ভিতর,

যে ভৌতিক ভয়ে কেঁপে যায়

জীবনের স্বপ্ন, স্বাধীনতার প্রতি প্রতি প্রহর—

তাকে নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে

সাসপেন্স বর্ণনা আসে না,

বরং গা রিরি করা ঘেন্না কিছুতে থামে না।

যতবার ভেবেছি, একটা ভূতের গল্প

ততবার হয়নি,

অভূতপূর্ব শরীরী ভয়ঙ্করের ভয়াবহতা

কোনও অশরীরীর উপর চাপিয়ে দিতে চাইনি,

—পারিনি, পারা হয়ই নি

একটি নিপাট ভূতের গা ছমছম গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published.