বিগত দুবছর ধরে মাথার উপর আকাশটা সত্যিকারের নীলাকাশ। যে নীল আকাশ আর সাদামেঘের ভেলার কথা কবির কলমে পড়েছি তা এখন স্বচক্ষে দেখতে পাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিমারীর কারণে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম বলে দূষণ কম। তাই দূষণে ঢাকা ঘোলাটে আকাশ এখন নীল আকাশ। শরৎ এখন আকাশে বাতাসে। শহর ছাড়িয়ে একটু দূরে যেতেই নজর আটকাচ্ছে কাশফুলের সাজো সাজো রূপে। শহর, মফস্বলের ফুটপাতের দোকানগুলিতে নিত্যনতুন জিনিসের পসরা। শপিং মলগুলো সারা বছরের থেকে আরও বেশি ঝকঝকে। পটুয়াপাড়ায় পটুয়া ব্যস্ত চিন্ময়ী মায়ের শেষবেলার সাজে। হাতে বেশি সময় নেই। আর কিছুদিনের মধ্যেই চিন্ময়ী মা মৃণ্ময়ী মা হয়ে আসবেন আমাদের কাছে।
এই আনন্দ ধারার সঙ্গে সঙ্গত রেখে নতুন সাজে নতুন রূপে ধীরে ধীরে সেজে উঠছে অদ্বিতীয়া ম্যাগাজিন। দেখতে দেখতে অদ্বিতীয়া আজ দশ বছরে পা দিয়েছে। ২০১১-র এমনই এক শরতের আকাশকে সাক্ষী রেখে পুজোর আগে জন্ম নিয়েছিল অদ্বিতীয়া পত্রিকা। পাঠকের অফুরন্ত ভালবাসা পেয়েছে অদ্বিতীয়া এই দীর্ঘ চলার পথে। দশ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অদ্বিতীয়াকে এবার আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চলেছি আমরা। এখন ফেসবুক এবং ইউটিউব সর্বত্রই অদ্বিতীয়া ম্যাগাজিনের স্বাদ নিতে পারবেন বন্ধুরা। বিউটি স্টোরি, নিবন্ধ, পার্শ্বকথা, স্টাইল নোটস, রসুই, সেলেব টক, গল্প এবং কবিতার পসরা সাজিয়ে এবারের শারদ বরণে থাকছে নতুন অনেক চমক। প্রকৃতি যেমন তার সর্বস্ব উজার করে দেয় মায়ের আগমনে। ঠিক তেমনই শারদ উৎসবের আনন্দে সামিল অদ্বিতীয়া ম্যাগাজিনের ডিজিটাল প্লাটফর্মও।
ওয়েস্টার্ন পোশাকে সজ্জিত তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে কর্পোরেট দুনিয়ার নারী পুরুষ প্রত্যেকেই পুজোতে চায় এক্সক্লুসিভ সাজে সেজে উঠতে। বাঙালির এই শ্রেষ্ঠ উৎসবে সাজপোশাকে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া পছন্দ করেন বেশিরভাগ বাঙালি। পোস্ট মর্ডান বঙ্গবধূটিও চায় দশমীর ঠাকুরবরণে সিঁদুর আর শাঁখা পলায় নিজেকে সাজাতে। কেবল সাজপোশাকেই নয় ভুরিভোজেও বাঙালির পাতে দেখা যায় হারিয়ে যাওয়া অনেক বাঙালি পদ। আপামর বাঙালির এমন বিপুল সমষ্টিগত আবেগের উৎসারণ বোধহয় বছরে এই একটি সময়ই দেখা যায়।
সেই আবেগের জোয়ার এসে স্পর্শ করেছে অদ্বিতীয়াকে। অদ্বিতীয়া ফিরছে নতুন রূপে নতুন সাজে। এখন থেকে অদ্বিতীয়া শুধু “অদ্বিতীয়া”। অর্থাৎ কেবল প্রথমাই নয়, সে তেজস্বিনীও। এবার পুজোয় তার বোধন নবরূপে। পুরুষের দেওয়া অস্ত্র নয়, সকল নারীর বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তি আর তেজপুঞ্জের নতুন রূপের প্রকাশ ঘটবে এবার অদ্বিতীয়ার পাতায় পাতায়।
ঠিক এভাবেই আমি গড়তে চাই আমার আশেপাশের প্রতিটি অদ্বিতীয়াকে। যারা সম্পূর্ণভাবে হবে স্বনির্ভর। এই উদ্দেশে এ বছর আমি বেশ কিছু প্রকল্প এবং উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে পিছিয়ে পড়া মেয়েরাও আত্মনির্ভরতার শক্তি খুঁজে পায়। আত্মরক্ষার ক্ষেত্রেও যেন তারা আত্মনির্ভর হতে পারে। আমার উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে বহু নারী। এই নতুন প্রয়াসটিকে এখন থেকে আমি সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই ডিজিটাল মাধ্যমে। আর তাই নতুন ভাবে নতুন রূপে শারদবরণ সংখ্যা সেজে উঠল উৎসবের সাজে। সাহিত্য, রূপচর্চা, ফ্যাশন, রান্নাবান্না, বেড়ানো, ঘর সাজানো- সবেতেই থাকছে নতুন মেজাজ।
আমার কাছে নারী তখনই সম্পূর্ণা, যখন সে একাধারে চণ্ডী এবং মহামায়া। আগামী দিনগুলিতে আমার অদ্বিতীয়াকে সেই ছাঁচে গড়ে তোলারই একান্ত প্রচেষ্টা থাকবে। আশা করি আগের মতই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, সব বন্ধুদের পাশে পাব আমি। মায়ের কাছে আমার প্রার্থনা পৃথিবী সব অসুখ থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক। সকলের পুজো ভালো কাটুক। সুস্থ সুন্দর থাকুন সবাই। সবার জন্য রইল শারদীয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।