শহীদের মৃত্যু নেই।।পার্থ প্রতিম দাস

চৈত্রের এক ঝড়-জলের রাত। বাইরে শুনতে পাচ্ছি দুর্দান্ত বজ্রপাতের শব্দ। বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছে এক একবার। আর সে কী ভয়ানক বৃষ্টি! চিলেকোঠার টিনের ছাদে যেন ব্যাণ্ড বাজছে কিংবা হাজার কঙ্কাল নৃত্য জুড়েছে৷ এমন সময়েই এই গল্পের অবতারণা। আমি গল্প লেখার আগেই গল্প গুছিয়ে রাখতে পারিনা। স্মৃতি দুর্বল, ক্ষমতা যৎসামান্য বললেও বেশি বলা হয়। তার ফাঁকেই ছেলেবেলায় দিদার কাছে শোনা একখানি গল্পে রঙ চাপিয়ে নিয়ে এলুম। দিদা তাঁর নব্বই বছরের জীবনকালে ওই গল্প কম করেও একানব্বই জনকে শুনিয়েছেন। তাই তাঁর রঙ চাপানো নিয়ে ভাববার অবস্থায় নেই। এ জম্মে এখনও ভূত দেখিনি, বারকয়েক গা ছমছম বাদে পাতা ভরানোর মতো তেমন অনুভূতি হয় নি। বোধহয় আমার মতো পাপী লোককে তাঁরা দর্শন দিতেও কুন্ঠা বোধ করেন। তবে কিছু কিছু পবিত্র দৃশ্য না দেখলেও জীবনে বিশেষ কিছু লোকসান হয় না, এ বেলাও তাই।

অবিভক্ত বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ছোট্ট একখানি গ্রাম। তেমন নামজাদা কিছু নয়। আমার দিদা বরিশালের বাপের বাড়ি থেকে মাথায় সিঁদুরের দায় নিয়ে উঠেছে ফরিদপুরের সিংহবাড়িতে। মা ষষ্ঠীর কৃপায় পরিবারের সদস্যের অভাব নেই। তাদের মধ্যে গলাগলি যেমন আছে, আবার থালা থেকে বাটি খসলে খিটির মিটির। তবে ভদ্রবাড়ি কিনা, আড়ালে হিসহিসানি টের পাওয়া যায় সাঁপুড়ের কান থাকলে। সংসারে এমন সাঁপুড়ে থাকে খানকতক। ঘটি-বাটিতে দিন কাটছিল, নিস্তরঙ্গ। কিন্তু মানুষের জীবন জলের মতো, সে তরঙ্গপ্রেমী। তাই প্রকৃতির অলঙ্ঘ্য নিয়ম মেনে ঘটনাটা ঘটল৷

১৯৩o সাল। কার্তিক মাস। বাংলাদেশ তখন উত্তাল। চারদিকে বন্দে মাতরম রব উঠছে। ক’মাস আগে চট্টগ্রামে আচমকা জ্বলজ্বলে চোখের এক সাদামাটা ছিমছাম চেহারার লোক একদল তেজী ছোকরাদের নিয়ে তুলকালাম বাঁধিয়েছে। অস্ত্রাগার লুঠ করে, টেলিগ্রাফ, রেললাইনে বোমাবাজি করে হতচ্ছাড়া লালমুখোদের দারুণ ঘায়েল করেছে। বিলিতি আত্মাভিমানে বিষম খোঁচা, তাই পুলিশ পাগলা কুকুরের মতো খুঁজছে মাস্টারদাকে। পেলে ছিঁড়ে খাবে। ওরা অত দূর থেকে ঠেঙিয়ে এ দেশে এসেছে বর্বরদের সভ্য করতে, তার মধ্যে এ কী বেয়াদবী! সেসব খবর বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের ঘাটে-পথে, পুকুরের জলে দোলা লেগেছে। সিংহী বাড়ির অন্দরেও এ নিয়ে জল্পনা চলছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ ঘটনায় কেউ বিচলিত, কেউ ভয়ার্ত, আবার কেউ আনন্দিত। দিদার বয়স অনুপাতে বিপ্লবী কীর্তিকলাপের গাঢ়ত্ব বোঝার কথা না। দ্বাদশী কিশোরির তখন অন্দরমহলে সঙ্গিনী জুটিয়ে খেলায় মত্ত থাকার কথা। সে তাই করে। আর মাঝে মধ্যে বড়ো জায়ের পিছু পিছু এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। শ্বাশুড়ি প্রায় সবসময়ই অগ্নিলোচনা, মুখে খর বাক্যের স্রোত বইছে। তাই মায়ের জায়গাটা অলিখিতভাবে বড়ো জা-ই লাভ করেছে।

কার্তিক মাসের শীতে বেলা ছোটো হয়ে আসছে। বাচ্চা-বুড়োর খাওয়া দাওয়া শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। দিনমণি দ্রুত আকাশ ত্যাগ করছে৷ জাঁকিয়ে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে এর মধ্যেই। বাড়ির পুকুরটি বেশ বড়ো। সিংহী বাড়ির দিকে যেমন চারটি ঘাট, পুকুরের উলটো পাড়ে আরো তিনটি ঘাট। বড়ো বউ আর বাড়ির আশ্রিতা অকালে স্বামীহারা পিলু দুপুরের বাসন মাজে সিংহীদের ঘাটে। সিড়ির ধাপের এক কোণে তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে আমার কিশোরী দিদা। পিলুর স্বামী মরেছে নাকি বেঁচে খবর নেই। মাস খানেক আগে এক বর্ষারাতে বাড়িতে এক গোরা দারোগা আরো সাত আটজন নেটিভ পুলিশ সঙ্গে নিয়ে তার বাড়িতে হানা দেয়। পিলুর স্বামীকে বেদম পিটিয়ে একটা গুপ্তঘরের সন্ধান পায় তারা, সেখান থেকে একগাদা বিপ্লবীদের দুর্বোধ্য কাগজপত্র, গুচ্ছের ম্যাপ আর একখানি পিস্তল উদ্ধার হয়। সন্দেহ মাস্টারদার দলে ভিড়েছে সে। ব্যাস, নৃশংসভাবে তাকে মারতে মারতে আধমরা করে ভ্যানে তুলে নিয়ে চলে যায় পুলিশ। আর ফিরে আসেনি। বলা বাহুল্য, গোরা সাহেব পুলিশটি চুপচাপ সরু চোখে দাঁড়িয়ে ছিল, অত্যাচার যা করার করেছে নেটিভ পুলিশ অফিসার আর তার দু’জন সহকারী। তারা এই কাজে বেশ চোস্ত বলা যেতে পারে। যাবার আগে এক নেটিভ কনস্টেবল লাল চোখ, বিকৃত মুখভঙ্গি করে আচমকা পিলুর শাড়ি, ব্লাউজ টান মেরে ছিঁড়ে দেয়। বাকিটা বর্ণনার অযোগ্য। পিলুর বাবা সিংহী বাড়ির বড়োবাবুর বন্ধু। পরের দিন খবর পেয়ে এমন ভয়ানক বিপদ থেকে পিলুকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। পিলুর চোখে মুখে তখনও আতঙ্ক, শরীরে নৃশংসতার আঘাত স্পষ্ট, মনের চলচ্ছক্তি লোপ পেয়েছে। বড়োবাবু বাড়িতে এহেন মেয়েকে বাড়িতে এনে তুললে কেউ কেউ মৃদু আপত্তি তুলেছিল। অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাঁর মুখের উপর কেউ কথা বলে না। সুতরাং, বেচারি মেয়েমানুষ, একে বড়োবাবুর বন্ধুর মেয়ে, তায় মারাত্মক সর্বনাশ হয়ে গেছে, থাক বাড়ির এক কোণে পড়ে, কাজ-বাজ করবে- এমন একটা ছেঁড়া ছেঁড়া যুক্তি সাজিয়ে সবাই মেনে নিয়েছিল। তারপর থেকে পিলু বাড়ির পশ্চিম কোণে ভাঙাচোরা জিনিস ডাঁই করা ঘরে একখানি চৌকি আর পুরনো কলসী নিয়ে তার বাতিল জীবন কাটাচ্ছিল।

পিলু তার স্বামীকে প্রাণপণে ভালোবাসে। স্বামীকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার দিনে সে ভারি মানসিক আঘাত পেয়েছিল, মাসখানেক ধরে তাকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করেছে সেই অভিশপ্ত সন্ধ্যাটা। শহীদের নাকি মৃত্যু নেই– এ কথা প্রায়ই বলত সুরেন, তার স্বামী। সারা দুনিয়ার বিপ্লবীদের নাকি এই এক জবরদস্ত মন্ত্র। এই একটি কথায় ফাঁসুড়েদের কাজ যে কত বেড়ে গেছিল।

মাস দুই কাটলে পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। তবে রাতের অন্ধকারে প্রায়ই তার মনে হয় খাটের চারপাশে কে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যে শীতল স্পর্শে চমকিত হয়, শরীরে যেন হিম ধরিয়ে দেয়। জমাট অন্ধকারে সে কোনো অবয়ব ঠাহর করতে পারে না, কিন্তু কেন যেন মনে হয় কেউ ঠিক আছে, তাকে কিছু বলতে চায়। অদ্ভুত গন্ধ ভাসছে বাতাসে। একটা অস্ফূট হাহাকার ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। তার একটু ভয় ভয় লাগে। কুপি জ্বালাবার সাহস হয় না। যদি সত্যি তেমন কাউকে দেখতে পায়? তার মুখ যদি সে সহ্য করতে না পারে? কিংবা যদি সেটা সুরেনবাবুর মুখ হয়, আতঙ্কে কাঠ হয়ে যায় পিলু। সে জানে সুরেন বেঁচে নেই, থাকলেই সেটা আশ্চর্যের হবে। বিয়ের এক মাসের মধ্যে সুরেনকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে, সেই থেকে নিপাত্তা। এক মাসে একজন অচেনা মানুষকে কতটাই বা ভালোবাসা যায়? তাও ভালোবাসা জন্মে গেছে মানুষটার প্রতি, অন্তত তার অসীম সাহস আর দুরন্ত কর্মকাণ্ড খানিক কল্পনা করে। তবু যে মানুষটা মৃত সে এসে সামনে দাঁড়ালে তাকে সোহাগ করার মতো সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই তার নেই। বরং অনাহূত দৃশ্যটা ভাবলেই গা’টা ছমছম করে ওঠে। নিজের শরীরটা বেশ করে কাঁথায় মুড়ে নেয় সে। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়ে। পিলু যদি জানত, সে ঘুমিয়ে পড়লে তার অজ্ঞাতে তার চুলে, পিঠে হাত বুলিয়ে দেয় একজন, ঠিক যেমন বাতাসের স্পর্শে দোলা লাগে আম, হিজলের পাতায় পাতায়, জপযন্ত্রের ঘুর্ণনে উচ্চারিত মন্ত্রধ্বনি হাওয়ার শরীর ছুঁয়ে শুদ্ধ করে।

সেদিন বেশ ভোর ভোর আচমকা বিষম হইহল্লাতে তার ঘুম ভেঙে গেল। ধরফরিয়ে উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে দরজাটা খুলে সে ছুটল বাইরে। আওয়াজ আসছে বড়ো রাস্তার দিক থেকে। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল ছোটোখাটো ভিড় জমেছে। অধিকাংশই গ্রাম্য লোক। চারদিকে তখনও গাঢ় কুয়াশা। আস্ত মানুষগুলিকে প্রেতমূর্তির মতো দেখাচ্ছে। বাড়ির মোটামুটি সবাই জড়ো হয়েছে, মেয়ে বউরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে। আমার নবোঢ়া দিদা ঘোমটা টেনে বড়ো জায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়েছে। পিলু এসে তাদের পাশে দাঁড়ালো। খুন।

ফুটবলের মতো চারটে মুন্ডু গড়াচ্ছে, কোনোটা রাস্তায়, কোনোটা রাস্তা টপকে পাশের ঘাসজমিতে নেমে গেছে, কোনোটা আবার রাস্তার ধারের জলার তীর বরাবর যে ঢালু অংশ সেখানে একটা কাঁটাঝোপে আটকে। কাঁটঝোপের মুন্ডুটা কোনো শ্বেতাঙ্গ সাহেবের, বাকি তিনটে নেটিভ। সাহেবের নীল কটা চোখের মণি ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে, বাকি তিন নেটিভের চোখের জায়গায় গভীর গর্ত, গভীর আক্রোশে কেউ চোখগুলি খুবলে নিয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, কারোরই বাকি দেহের খোঁজ নেই। এক কোপে ধর মুন্ডু আলাদা হয়েছে। এমন বীভৎস দৃশ্যে স্বাভাবিকভাবে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, বিস্ফারিত চোখে সবাই দেখছে। না জেনে রঙ্গ দেখতে এসে অনেকেই স্থির দাঁড়াতে পারে নি, ছুট দিয়েছে, গ্রামের মাতব্বর রমাপদ আবার ঘন ঘন অজ্ঞান হচ্ছে। বিশ্বাস বাড়ির বিধবা পিসি এ পথ দিয়ে যেতে গিয়ে প্রথম এই অতিপ্রাকৃত কাণ্ডখানা দেখেন, তারপর এক বিকট চিৎকার দিয়ে সেই যে জ্ঞান হারিয়েছেন আর ওঠেননি, জল-বাতাস চলছে, সাড়া নেই। বেচারি ভদ্রমহিলা বাকি জীবনটা মূক-বধির-ছিটগ্রস্থ হয়েই কাটাবেন- এই বিধাতার নির্দেশ। মজার ব্যাপার, এমন কুদৃশ্যের দিকেই ছেঁটে-কেটেও জনা পনের-কুড়ি লোক একমনে তাকিয়ে রয়েছে। অবশ্য যত ঘিনঘিনে বিকৃত দৃশ্য মানুষ উপভোগ করে বেশি। হতভাগ্য অনুভূতিহীন মুন্ডুগুলো কী ভাবছে কে জানে। কী অদ্ভূত! ধরখানি জোড়া থাকলেই এ মুন্ডু পুরো একখানি জীবনকে নাচিয়ে ছেড়েছে।

ধীরে ধীরে সূর্য মুখ বার করেছে। সেও বুঝি তামাশা দেখতে চায়। কুয়াশা ভেগেছে। হঠাৎ কান ফাটানো শব্দে একটা বাজ পড়ল কোথাও। সকালের নতুন আলো স্তিমিত হয়ে আসছে। জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে একটা চঞ্চলতা দেখা গেল। আকাশের এক কোণে কালচে নীল মেঘ জমেছে এর মধ্যেই। এ কী লীলা প্রকৃতির! একটা গুঞ্জন শুরু হয়েছে, সেটা কলরোলে পরিণত হচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ এসে গিয়েছে। ঘোড়ায় চড়ে গোলাপী মুখের এক সাহেব পুলিশ আর তার পিছু পিছু জনা কয়েক হাফ প্যান্ট পরা দামড়া নেটিভ কনস্টেবল। তাদের দেখে পিলুর শরীরটা থরথর করে একবার কেঁপে ওঠে। মাথাটা কেমন পাক দিয়ে উঠল। ভিড় ঠেলে সে সামনে এগোতে থাকে। স্বজনহারা মেয়েমানুষকে আর কে খেয়াল করবে, তার উপর নিয়ম খাটে না। বড়ো আর মেজ বউ একবার বললে বটে, ‘ও কী, করস কী! থাম! থাম!’

কে থামবে! পিলু ততক্ষণে এগিয়ে গেছে সামনে। এক কনস্টেবল চারটে মুন্ডু রাস্তার উপর জড়ো করেছে। যেন কোনো বিশেষ প্রদর্শনী চলছে। মুন্ডুগুলো এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে পিলু। আমি সে দৃশ্য কল্পনা করতে পারিনা, চাইও না। তবে এটুকু জানি, নৃশংসতা, অমানুষিকতার প্রভাব ছাপিয়ে তার সারা দেহে তখন বিস্ময় এবং আতঙ্কের যুগ্ম প্রতিফলন। সে চোখ সরাতে পারে না, যেন জোর করে তার মাথাটা চেপে ধরে রেখেছে ওই চারটে অবিস্মরণীয় নিস্প্রাণ মুন্ডুর দিকে । পা দুটো যেন মাটির সঙ্গে পেরেক দিয়ে গেঁথে দিয়েছে। পরমুহূর্তেই নিজের সমস্ত শক্তি একত্র করে এক অপার্থিব চিৎকার দিয়ে ছুট লাগায় নিজের ঘরের দিকে। দারোগা সাহেব, বড়োবাবু, মেজবাবু সবাই ঘটনার আকস্মিকতায় থ মেরে গেলেন খানিকক্ষণ। তারপর মেয়েমানুষের দুর্বল মনের প্রতি করুণাবর্ষণ করে আবার কাজে মন দিলেন।

পিলু এক ছুটে ঘরে এসে এক ধাক্কায় দরজা খুলে বিছানায় আঁছড়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। চোখ ঝাপসা হয়ে জল গড়ায় তার শ্যামলা হাতের কবজি বেয়ে। কিন্তু সামনে ওটা কী পড়ে আছে? একটা পুরোনো হলদেটে খাম। সেটা খুলতেই দেখা গেল একটা ভাঁজপড়া মলিন কাগজ। তাতে লাল কালিতে কী যেন লেখা। চোখ ভর্তি জল থইথই করছে। কৌতুহলী হয়ে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে কাগজটা সামনে মেলে ধরল সে। যা দেখল তাতে নিমেষে তার তরুণী বুক কেঁপে উঠল। বাইরে চারদিক কাঁপিয়ে বাজ পড়ছে, ঝোড়ো হাওয়ার শব্দ উঠেছে শোঁ শোঁ। উদ্ধত যৌবনে আক্রান্ত পিলুর শরীর শায়িত, স্থির। কিছু কিছু অতিপ্রাকৃত বিষয়ের অদ্ভুত সম্মোহনী ক্ষমতা থাকে, তেমনি। সে টের পাচ্ছে তার মধ্যে এক আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটে চলেছে। তার আর ভয় লাগছে না, চারটে ধরছাঁটা মুন্ডুও তার মনে কোনো আতঙ্ক জাগাতে পারছে না, বর্বর,বিকৃত সব দৃশ্য লহমায় মুছে গিয়ে তার সারা শরীর এক অনাবিল আনন্দে ভরে উঠছে, ঠোঁট কাঁপছে উত্তেজনায়। নিভৃত চোখজোড়ায় অনেক দিনের চাপা উল্লাস ফুটে উঠেছে। সামনে দু’হাতের আঙুলে আঁকড়ে ধরা মলিন কাগজে কাঁপা কাঁপা হাতে রক্ত দিয়ে লেখা, ‘শহিদের মৃত্যু নেই।’

১ Comment

  1. এক কথায় অনবদ্য। লেখার বাঁধন থেকে মূল বিষয় খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.